মৃত্যুর চিন্তা

মৃত্যুর চিন্তা আসলে কি করণীয়

    মৃত্যুর চিন্তা


    মৃত্যুর চিন্তা  মৃত্যুর চিন্তা               রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) বলেছেন-  ‎‫أكثروا من ذكر هادم اللذات .‬‎  - 'তোমরা পৃথিবীর আমোদ-প্রমোদ বরবাদকারী মৃত্যুর কথা অধিক স্মরণ কর।  মৃত্যুর কথা ভাবলেই তোমাদের হৃদয়ে লালিত মায়া-মোহ ক্রমশঃ দুর্বল হতে থাকবে। এভাবে অচিরেই মন থেকে দুনিয়ার ভালবাসা বিদূরিত হয়ে পরকাল ও আল্লাহ্ প্রতি আকৃষ্ট হবে।  তিনি আরও বলেছেন, 'মানুষ যেমন মৃত্যুর কথা জানে, জীবজন্তুরাও তেমনভাবে জানলে তোমাদের আহারের উপযুক্ত কোন তাজা প্রাণীই পাওয়া যেত না; সকল জীবই মৃত্যুর চিন্তায় দুর্বল হয়ে শুকিয়ে যেত।  একদা হযরত আয়েশা (রাঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! হাশরের ময়দানে শহীদদের সাথে আর কেউ শাহাদতের মর্যাদা প্রাপ্ত হবে কি?' রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বললেন, 'হাঁ, যে ব্যক্তি দিন ও রাতে বিশ বার মৃত্যু স্মরণ করবে সে-ও শহীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।  মৃত্যুর ধ্যান ও চিন্তা ভাবনার এত বেশি ফযীলতের কারণ হল, এর মাধ্যমে মানুষ পার্থিব জগতের মায়া-মহব্বত থেকে মুক্ত ও নিবৃত্ত এবং সর্বদা পরকালের প্রস্তুতি কার্যে নিমগ্ন থাকে। হাদীস শরীফে আছে—  তালা বা  মৃত্যু মোমিনের জন্য উপহারস্বরূপ।  কেননা, দুনিয়া তার জন্য কয়েদখানা; এখানে দুঃখ ক্লেশে জীবনাতিপাত করতে হয়, প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে চলতে হয়, নফসের তাড়না সংযত করে শয়তানের মোকাবেলা করতে হয়। অনন্তর একমাত্র মৃত্যুই তাকে এসব দুঃখ-যাতনা থেকে অব্যহতি দিতে পারে।  হাদীস শরীফে আরও আছে—  ‎‫الموت كفارة لكل مسلم .‬‎ —মৃত্যু প্রত্যেক মুসলমানের গুনাহের কাফফারা, যা তাকে গুনাহ থেকে পাক-সাফ করে দেয়।  তবে শর্ত হল, তাকে সত্যিকার মুসলমান হতে হবে। কারো আচার-ব্যবহার ও ক্রিয়াকলাপে যদি অন্যে কষ্ট পায়, তবে মৃত্যু তার গুনাহের কাফফারা হবে না । একজন মুসলমানের যা সদগুণাবলী হওয়া উচিত তা সবই তার মধ্যে বিরাজমান। থাকতে হবে; সকল বড় বড় গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করে চলতে হবে,    সকল ফরয দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে, তবেই মৃত্যু মুসলমানের সগীরা গুনাহসমূহ থেকে মুক্তির কারণ হবে।  একদা রাসূলুল্লাহ (ছঃ) একদল লোককে উচ্চের কথা তামাশায় লিপ্ত দেখে তাদের উদ্দেশ করে বললেন, যে বন্ধু হাসি তামাশার অহেতুক আসর ভিক্ত করে দেয়, তোমরা সে বস্তুটিকে স্মরণ কর। কেরা হল, তা কি হে আল্লাহ্র রাসূল। তিনি বললেন, মৃত্যু। হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বাণত। রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) বলেছেন-  ‎‫أكثروا من ذكر الموت فانه يمحص الذنوب ويزهد في الدنيا.‬‎ —'তোমরা মউতকে বেশি বেশি স্মরণ কর; কেননা মউতের চিন্তা গুনাহসমূহ বিলুপ্ত করে দেয়, দুনিয়ার প্রতি হৃদয়ে ঘৃণা জন্মায় । হাদীসে বর্ণিত হয়েছে—  ‎‫- كفى بالموت واعظا .‬‎ — মানুষের উপদেশের জন্য মৃত্যুই যথেষ্ট।'  একদা রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) মসজিদে গমনকালে একদল লোককে কথাবার্তা ও হাসি তামাশায় লিপ্ত দেখে বললেন : ‎‫تعلمون ما أعلم‬‎  ‎‫أذكروا الموت أمـا والـذي‬‎ ‎‫والذي نفسي بيده لو‬‎  ‎‫لضحكتم قليلا لبكيتم كثيرا .‬‎  — মউতকে স্মরণ কর। আল্লাহ্র কসম! তোমরা যদি তা জানতে যা আমি জানি, তবে তোমরা কম হাসতে এবং বেশি বেশি কাঁদতে।'  রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ)-এর নিকট জনৈক লোকের খুবই প্রশংসা করা হয়েছিল। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'সে ব্যক্তি কি মৃত্যুর চিন্তা করে?' লোকেরা বললো, মৃত্যুর চিন্তা তো সে করে না। রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) বললেন, 'তাহলে সে প্রশংসিত হওয়ার অযোগ্য, ইতোপূর্বে তোমরা যা উল্লেখ করলে।'  হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন : একদা আমরা দশ জন লোক রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ)-এর দরবারে হাজির হলাম। সর্বশেষে হাজির হয়েছি আমি। এ সময় একজন আনসার রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! সবচেয়ে জ্ঞানী, বুদ্ধিমান ও সম্মানী ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, 'যে ব্যক্তি মউতকে বেশি বেশি স্মরণ করে, মউতের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকে, সে-ই প্রকৃত জ্ঞানী, ইহ-পরকালে সম্মানী ও সফলকাম।     রবী ইবনে বায়সান (রঃ) বলেন, গোপন বস্তুসমূহের মধ্যে মউত অপেক্ষা উত্তম আর কিছু নেই, যার জন্য মোমিন অপেক্ষমাণ থাকে। তিনি আ বলতেন, আমার সংবাদ আর কাউকে দিও না; আমি নির্জনে থাকা ভালবাসি আমার কল্যাণের জন্য তোমরা আল্লাহ্র কাছে দোয়া করো ।  জনৈক তত্ত্বজ্ঞানী নিজের ভাইকে উপদেশ দিতে গিয়ে লেখেছেন, 'মৃত্যুকে ভয় কর, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নাও, আখেরাতে পৌঁছার পূর্বেই তুমি মৃত্যুর প্রকৃতি সম্পন্ন কর, যেখানে তোমাকে অনন্তকাল অবস্থান করতে হবে।  হযরত ইবনে সিরীন (রঃ)-এর সামনে মউতের আলোচনা উঠলে তিনি    শঙ্কিত হয়ে মৃতের মত হয়ে যেতেন।  হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয (রঃ) প্রত্যেক রাতে মৃত্যুর আলোচনার জন্য ফকীহদের সভা আহ্বান করতেন, সভায় উপস্থিত ফকীহদের মুখ থেকে মৃত্যু এবং কেয়ামতের ভয়াবহ অবস্থার আলোচনা শুনে তিনি রীতিমত কাঁদতে থাকতেন।  হযরত ইবরাহীম তায়মী (রঃ) বলেন, 'দু'টি চিন্তা পার্থিব জগতকে আমার  নিকট বিষাদময় করে তুলেছে। এক, মৃত্যু; দ্বিতীয়, আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর  হযরত কা'ব (রাঃ) বলেন, 'যে মৃত্যুর আসল রূপ উপলব্ধি করতে পেরেছে, দুনিয়ার বিপদ ও দুঃখ-কষ্টে ধৈর্যাবলম্বন তার জন্য সহজ হয়ে গেছে।  হযরত আশ'আস (রঃ) বলেন, হযরত হাসান (রঃ)-এর দরবারে যখনই আমরা হাজির হতাম, কেবল মৃত্যু, আখেরাত ও জাহান্নামের আলোচনাই  হযরত সফিয়া (রাঃ) বলেন, একদিন আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট এক মহিলা নিজের হৃদয়ের কাঠিন্যের কথা বললে তিনি তাকে উপদেশ দিলেন, তুমি মৃত্যুকে বেশি বেশি মনে কর, দেখবে তোমার অন্তর নরম হবে। অনন্তর সে মহিলা হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর উপদেশ অনুযায়ী মৃত্যুর স্মরণ করলে তার মন আসলেই নরম হয়ে গেছে। এজন্যে পরবর্তীতে একদিন সে মহিলা হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর খেদমতে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে হাজির হন।     হযরত ঈসা (আঃ)-এর সামনে মৃত্যুর আলোচনা করা হলে তাঁর দেহ থেকে রক্ত বেরিয়ে পড়ার উপক্রম হত। হযরত দাউদ (আঃ) মৃত্যুর চিন্তায় অধীর হয়ে এতো বেশি ক্রন্দন করতেন  যে, তার দেহের গ্রন্থিরাজি আলাদা হয়ে যাওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে যেতে।     আবার আল্লাহর রহমত ও দয়ার আলোচনা করা হলে তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতেন। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন, যে ব্যক্তি বুদ্ধিমান সে কখনও মৃত্যু থেকে     পালায় না বা দুঃখিত হয় না।  হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয (রঃ) কোন এক বুযুর্গের কাছে উপদেশ চাইলে তিনি বলেছিলেন, 'আপনি সর্বপ্রথম খলীফা যিনি নিহত না হয়ে স্বাভাবিক ইনতেকাল করবেন। হযরত আদম (আঃ) পর্যন্ত আপনার সকল পূর্বপুরুষের মধ্যে কেউ মৃত্যু থেকে অব্যাহতি পায়নি, এখন আপনার পালা এসেছে।' এ কথা শুনে তিনি কাঁদতে শুরু করেন।  হযরত রবী' ইবনে খায়সাম (রঃ) স্বগৃহে কবর খনন করে রেখেছিলেন। প্রত্যহ তিনি সেখানে শয়ন করতেন এবং মউতকে পুনঃ পুনঃ স্মরণ করে বলতেন, আমি এক মুহূর্তের জন্যেও মৃত্যুর কথা বিস্মৃত হলে বরবাদ হয়ে যাবো।' হযরত মুতাররেফ ইবনে আবদুল্লাহ (রঃ) বলেন, মৃত্যুর কবলে পতিত হতে  হবে বিধায় প্রচুর ধন সম্পদের অধিকারী মুক্ত মনে নিজের সম্পদ ভাগ করতে  পারে; কাজেই এমন নেয়ামত (বেহেশতের চিরশান্তি) প্রার্থনা কর যা ভোগ  করতে মৃত্যু বাধা সৃষ্টি করতে না পারে ।  হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয (রঃ) হযরত আম্বাসাকে বলেছেন, মউতকে বেশি বেশি মনে কর। কেননা, পার্থিব সম্পদের প্রাচুর্যের অধিকারী হলে সেটা হ্রাস করা উচিত, আর অভাবী হয়ে থাকলে ধৈর্য-সহিষ্ণুতার দরকার, এ দু'টিই সৃষ্টি হয় মউতের চিন্তা থেকে।    হযরত আবূ সোলায়মান দারানী (রঃ) বলেন, 'আমি উম্মে হারূনকে প্রশ্ন করলাম, তুমি কি মৃত্যু কামনা কর? সে বলল, যেক্ষেত্রে আমি সাধারণ কোন মানুষের অবাধ্য হলে তার সামনে উপস্থিত হতে লজ্জাবোধ করি, সেখানে আহকামুল হাকেমীন আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের অবাধ্যতা করে, কেমন করে তাঁর সামনে দাঁড়াতে সাহস করতে পারি?”     হযরত আবূ মূসা তামীমী (রঃ) বলেন, প্রখ্যাত কবি ফারাদাকের স্ত্রীর জানাযায় বড় বড় মনীষী হাজির হয়েছিলেন। হযরত হাসান বসরী (রঃ)ও উপস্থিত ছিলেন । তিনি ফারাদাককে প্রশ্ন করেছিলেন, 'আখেরাতের জন্যে তুমি কি করেছ?'     সে বলল, দীর্ঘ ষাট বছর ধরে কালেমা তাইয়্যেবা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'-এর সাক্ষ্য প্রদান করে আসছি। স্ত্রীর দাফনকার্য সম্পন্ন হওয়ার পর কবরের পার্শ্বে দণ্ডায়মান হয়ে তিনি কয়েকটি পংক্তি উচ্চারণ করেছিলেন, যা আসলেই প্রণিধানযোগ্য। পংক্তিগুলোর সারমর্ম হচ্ছে, ‘আমি কবরের পরবর্তী ঘাঁটিগুলো সম্পর্কে অধিকতর ভীত-সন্ত্রস্ত, ওগো আল্লাহ্! আপনি আমাকে ক্ষমা না করলে পথ নেই । হাশরের সেই ভয়াবহ দিনে আমি ফারাদাকের কি দশা হবে, যেদিন সামনে পৌঁছে ফেরেশতাগণ হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে। সেদিন সেই আদম সন্তানটি কতই না দুর্ভাগা হবে, যাকে বেড়ি পরিয়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।"
















    রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) বলেছেন-

    ‎‫أكثروا من ذكر هادم اللذات .‬‎

    - 'তোমরা পৃথিবীর আমোদ-প্রমোদ বরবাদকারী মৃত্যুর কথা অধিক স্মরণ কর।

    মৃত্যুর কথা ভাবলেই তোমাদের হৃদয়ে লালিত মায়া-মোহ ক্রমশঃ দুর্বল হতে থাকবে। এভাবে অচিরেই মন থেকে দুনিয়ার ভালবাসা বিদূরিত হয়ে পরকাল ও আল্লাহ্ প্রতি আকৃষ্ট হবে।

    তিনি আরও বলেছেন, 'মানুষ যেমন মৃত্যুর কথা জানে, জীবজন্তুরাও তেমনভাবে জানলে তোমাদের আহারের উপযুক্ত কোন তাজা প্রাণীই পাওয়া যেত না; সকল জীবই মৃত্যুর চিন্তায় দুর্বল হয়ে শুকিয়ে যেত।

    একদা হযরত আয়েশা (রাঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! হাশরের ময়দানে শহীদদের সাথে আর কেউ শাহাদতের মর্যাদা প্রাপ্ত হবে কি?' রাসূলুল্লাহ (ছঃ) বললেন, 'হাঁ, যে ব্যক্তি দিন ও রাতে বিশ বার মৃত্যু স্মরণ করবে সে-ও শহীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

    মৃত্যুর ধ্যান ও চিন্তা ভাবনার এত বেশি ফযীলতের কারণ হল, এর মাধ্যমে মানুষ পার্থিব জগতের মায়া-মহব্বত থেকে মুক্ত ও নিবৃত্ত এবং সর্বদা পরকালের প্রস্তুতি কার্যে নিমগ্ন থাকে। হাদীস শরীফে আছে—

    তালা বা

    মৃত্যু মোমিনের জন্য উপহারস্বরূপ।


    কেননা, দুনিয়া তার জন্য কয়েদখানা; এখানে দুঃখ ক্লেশে জীবনাতিপাত করতে হয়, প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে চলতে হয়, নফসের তাড়না সংযত করে শয়তানের মোকাবেলা করতে হয়। অনন্তর একমাত্র মৃত্যুই তাকে এসব দুঃখ-যাতনা থেকে অব্যহতি দিতে পারে।

    হাদীস শরীফে আরও আছে—

    ‎‫الموت كفارة لكل مسلم .‬‎ —মৃত্যু প্রত্যেক মুসলমানের গুনাহের কাফফারা, যা তাকে গুনাহ থেকে পাক-সাফ করে দেয়।

    তবে শর্ত হল, তাকে সত্যিকার মুসলমান হতে হবে। কারো আচার-ব্যবহার ও ক্রিয়াকলাপে যদি অন্যে কষ্ট পায়, তবে মৃত্যু তার গুনাহের কাফফারা হবে না । একজন মুসলমানের যা সদগুণাবলী হওয়া উচিত তা সবই তার মধ্যে বিরাজমান। থাকতে হবে; সকল বড় বড় গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করে চলতে হবে, 


    সকল ফরয দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে, তবেই মৃত্যু মুসলমানের সগীরা গুনাহসমূহ থেকে মুক্তির কারণ হবে।

    একদা রাসূলুল্লাহ (ছঃ) একদল লোককে উচ্চের কথা তামাশায় লিপ্ত দেখে তাদের উদ্দেশ করে বললেন, যে বন্ধু হাসি তামাশার অহেতুক আসর ভিক্ত করে দেয়, তোমরা সে বস্তুটিকে স্মরণ কর। কেরা হল, তা কি হে আল্লাহ্র রাসূল। তিনি বললেন, মৃত্যু। হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বাণত। রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) বলেছেন-

    ‎‫أكثروا من ذكر الموت فانه يمحص الذنوب ويزهد في الدنيا.‬‎ —'তোমরা মউতকে বেশি বেশি স্মরণ কর; কেননা মউতের চিন্তা গুনাহসমূহ বিলুপ্ত করে দেয়, দুনিয়ার প্রতি হৃদয়ে ঘৃণা জন্মায় । হাদীসে বর্ণিত হয়েছে—

    ‎‫- كفى بالموت واعظا .‬‎ — মানুষের উপদেশের জন্য মৃত্যুই যথেষ্ট।'

    একদা রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) মসজিদে গমনকালে একদল লোককে কথাবার্তা ও হাসি তামাশায় লিপ্ত দেখে বললেন : ‎‫تعلمون ما أعلم‬‎

    ‎‫أذكروا الموت أمـا والـذي‬‎ ‎‫والذي نفسي بيده لو‬‎

    ‎‫لضحكتم قليلا لبكيتم كثيرا .‬‎

    — মউতকে স্মরণ কর। আল্লাহ্র কসম! তোমরা যদি তা জানতে যা আমি জানি, তবে তোমরা কম হাসতে এবং বেশি বেশি কাঁদতে।'

    রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ)-এর নিকট জনৈক লোকের খুবই প্রশংসা করা হয়েছিল। তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'সে ব্যক্তি কি মৃত্যুর চিন্তা করে?' লোকেরা বললো, মৃত্যুর চিন্তা তো সে করে না। রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ) বললেন, 'তাহলে সে প্রশংসিত হওয়ার অযোগ্য, ইতোপূর্বে তোমরা যা উল্লেখ করলে।'

    হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন : একদা আমরা দশ জন লোক রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ)-এর দরবারে হাজির হলাম। সর্বশেষে হাজির হয়েছি আমি। এ সময় একজন আনসার রাসূলুল্লাহ্ (ছঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! সবচেয়ে জ্ঞানী, বুদ্ধিমান ও সম্মানী ব্যক্তি কে? তিনি বললেন, 'যে ব্যক্তি মউতকে বেশি বেশি স্মরণ করে, মউতের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকে, সে-ই প্রকৃত জ্ঞানী, ইহ-পরকালে সম্মানী ও সফলকাম।




    রবী ইবনে বায়সান (রঃ) বলেন, গোপন বস্তুসমূহের মধ্যে মউত অপেক্ষা উত্তম আর কিছু নেই, যার জন্য মোমিন অপেক্ষমাণ থাকে। তিনি আ বলতেন, আমার সংবাদ আর কাউকে দিও না; আমি নির্জনে থাকা ভালবাসি আমার কল্যাণের জন্য তোমরা আল্লাহ্র কাছে দোয়া করো ।

    জনৈক তত্ত্বজ্ঞানী নিজের ভাইকে উপদেশ দিতে গিয়ে লেখেছেন, 'মৃত্যুকে ভয় কর, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নাও, আখেরাতে পৌঁছার পূর্বেই তুমি মৃত্যুর প্রকৃতি সম্পন্ন কর, যেখানে তোমাকে অনন্তকাল অবস্থান করতে হবে।

    হযরত ইবনে সিরীন (রঃ)-এর সামনে মউতের আলোচনা উঠলে তিনি



    শঙ্কিত হয়ে মৃতের মত হয়ে যেতেন।


    হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয (রঃ) প্রত্যেক রাতে মৃত্যুর আলোচনার জন্য ফকীহদের সভা আহ্বান করতেন, সভায় উপস্থিত ফকীহদের মুখ থেকে মৃত্যু এবং কেয়ামতের ভয়াবহ অবস্থার আলোচনা শুনে তিনি রীতিমত কাঁদতে থাকতেন।

    হযরত ইবরাহীম তায়মী (রঃ) বলেন, 'দু'টি চিন্তা পার্থিব জগতকে আমার

    নিকট বিষাদময় করে তুলেছে। এক, মৃত্যু; দ্বিতীয়, আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর

    হযরত কা'ব (রাঃ) বলেন, 'যে মৃত্যুর আসল রূপ উপলব্ধি করতে পেরেছে, দুনিয়ার বিপদ ও দুঃখ-কষ্টে ধৈর্যাবলম্বন তার জন্য সহজ হয়ে গেছে।

    হযরত আশ'আস (রঃ) বলেন, হযরত হাসান (রঃ)-এর দরবারে যখনই আমরা হাজির হতাম, কেবল মৃত্যু, আখেরাত ও জাহান্নামের আলোচনাই

    হযরত সফিয়া (রাঃ) বলেন, একদিন আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট এক মহিলা নিজের হৃদয়ের কাঠিন্যের কথা বললে তিনি তাকে উপদেশ দিলেন, তুমি মৃত্যুকে বেশি বেশি মনে কর, দেখবে তোমার অন্তর নরম হবে। অনন্তর সে মহিলা হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর উপদেশ অনুযায়ী মৃত্যুর স্মরণ করলে তার মন আসলেই নরম হয়ে গেছে। এজন্যে পরবর্তীতে একদিন সে মহিলা হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর খেদমতে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে হাজির হন।




    হযরত ঈসা (আঃ)-এর সামনে মৃত্যুর আলোচনা করা হলে তাঁর দেহ থেকে রক্ত বেরিয়ে পড়ার উপক্রম হত। হযরত দাউদ (আঃ) মৃত্যুর চিন্তায় অধীর হয়ে এতো বেশি ক্রন্দন করতেন

    যে, তার দেহের গ্রন্থিরাজি আলাদা হয়ে যাওয়ার পর্যায়ে পৌঁছে যেতে। 



    আবার আল্লাহর রহমত ও দয়ার আলোচনা করা হলে তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতেন। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন, 


    যে ব্যক্তি বুদ্ধিমান সে কখনও মৃত্যু থেকে পালায় না বা দুঃখিত হয় না।


    হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয (রঃ) কোন এক বুযুর্গের কাছে উপদেশ চাইলে তিনি বলেছিলেন, 'আপনি সর্বপ্রথম খলীফা যিনি নিহত না হয়ে স্বাভাবিক ইনতেকাল করবেন। হযরত আদম (আঃ) পর্যন্ত আপনার সকল পূর্বপুরুষের মধ্যে কেউ মৃত্যু থেকে অব্যাহতি পায়নি, এখন আপনার পালা এসেছে।' এ কথা শুনে তিনি কাঁদতে শুরু করেন।

    হযরত রবী' ইবনে খায়সাম (রঃ) স্বগৃহে কবর খনন করে রেখেছিলেন। প্রত্যহ তিনি সেখানে শয়ন করতেন এবং মউতকে পুনঃ পুনঃ স্মরণ করে বলতেন, আমি এক মুহূর্তের জন্যেও মৃত্যুর কথা বিস্মৃত হলে বরবাদ হয়ে যাবো।' হযরত মুতাররেফ ইবনে আবদুল্লাহ (রঃ) বলেন, মৃত্যুর কবলে পতিত হতে

    হবে বিধায় প্রচুর ধন সম্পদের অধিকারী মুক্ত মনে নিজের সম্পদ ভাগ করতে

    পারে; কাজেই এমন নেয়ামত (বেহেশতের চিরশান্তি) প্রার্থনা কর যা ভোগ

    করতে মৃত্যু বাধা সৃষ্টি করতে না পারে ।

    হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীয (রঃ) হযরত আম্বাসাকে বলেছেন, মউতকে বেশি বেশি মনে কর। কেননা, পার্থিব সম্পদের প্রাচুর্যের অধিকারী হলে সেটা হ্রাস করা উচিত, আর অভাবী হয়ে থাকলে ধৈর্য-সহিষ্ণুতার দরকার, এ দু'টিই সৃষ্টি হয় মউতের চিন্তা থেকে।



    হযরত আবূ সোলায়মান দারানী (রঃ) বলেন, 'আমি উম্মে হারূনকে প্রশ্ন করলাম, তুমি কি মৃত্যু কামনা কর? সে বলল, যেক্ষেত্রে আমি সাধারণ কোন মানুষের অবাধ্য হলে তার সামনে উপস্থিত হতে লজ্জাবোধ করি, সেখানে আহকামুল হাকেমীন আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের অবাধ্যতা করে, কেমন করে তাঁর সামনে দাঁড়াতে সাহস করতে পারি?”




    হযরত আবূ মূসা তামীমী (রঃ) বলেন, প্রখ্যাত কবি ফারাদাকের স্ত্রীর জানাযায় বড় বড় মনীষী হাজির হয়েছিলেন। হযরত হাসান বসরী (রঃ)ও উপস্থিত ছিলেন । তিনি ফারাদাককে প্রশ্ন করেছিলেন, 'আখেরাতের জন্যে তুমি কি করেছ?' 



    সে বলল, দীর্ঘ ষাট বছর ধরে কালেমা তাইয়্যেবা 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'-এর সাক্ষ্য প্রদান করে আসছি। স্ত্রীর দাফনকার্য সম্পন্ন হওয়ার পর কবরের পার্শ্বে দণ্ডায়মান হয়ে তিনি কয়েকটি পংক্তি উচ্চারণ করেছিলেন, যা আসলেই প্রণিধানযোগ্য। পংক্তিগুলোর সারমর্ম হচ্ছে, ‘আমি কবরের পরবর্তী ঘাঁটিগুলো সম্পর্কে অধিকতর ভীত-সন্ত্রস্ত, ওগো আল্লাহ্! আপনি আমাকে ক্ষমা না করলে পথ নেই । হাশরের সেই ভয়াবহ দিনে আমি ফারাদাকের কি দশা হবে, যেদিন সামনে পৌঁছে ফেরেশতাগণ হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে। সেদিন সেই আদম সন্তানটি কতই না দুর্ভাগা হবে, যাকে বেড়ি পরিয়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।"


    LikeYourComment