ঈমান ও আমল দুই বন্ধু
ঈমান কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি
ঈমান কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি জানুন।
ঈমান ও আমল দুই বন্ধু
জনৈক বুজুরগানে কেরাম বলেছেন, ঈমান ও আমল দুই বন্ধু - একের অভাবে অপরের দ্বারা কোন উপকার হয় না। (সগির)
ঈমান ও আমল সম্পর্কে দশটি মূল্যবান উপদেশ
হযরত মায়ায রাদিআল্লাহ তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দশটা জিনিসের উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি তোমাকে হত্যা করা হয় এবং পোড়ান হয় তবুও তুমি আল্লাহ্ পাকের সাথে কোন কিছু শরীক করবে না। যদি তোমাকে তোমার পরিবার ও সম্পত্তি ছেড়ে বের হয়ে যেতে বলা হয় তবুও কখনো তোমার পিতামাতার অবাধ্যতা করবে না। কখনো ইচ্ছাকৃত ফরয নামায ত্যাগ করবে না।
কেননা যে ব্যক্তি এক ওয়াক্ত ফরয নামায ইচ্ছাকৃতভাবে ত্যাগ করে তার জন্য আল্লাহ্র কোন যিম্মাদারী থাকেন না। কখনো শরাব পান করবে না, কেননা শরাব সকল অশ্লীল কাজের মূল। গুনাহ্ থেকে সাবধান! কেননা, গুনাহর কারণে আল্লাহ্র ক্রোধ নাযিল হয়। মানুষ তোমাকে হালাক করলেও জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করবে না। যদি তুমি কোন লোকজনের সাথে থাক এবং তাদের মধ্যে মহামারী দেখা দেয় তাহলে দৃঢ়পদে থাকবে। তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করবে, তাদেরকে আদব শিখানোর ব্যাপারে কোনরূপ শিথিলতা করবে না এবং আল্লাহ্ সম্পর্কে তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করবে। (মুসনাদে আহমদ ও মা'আরিফুল হাদীস)
ঈমান পরিপূর্ণ করার পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ আমল
হযরত আবু হুরায়রা রাদিইয়াল্লাহ তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি একবার রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, এমন কেউ আছে কি? যে এ বিষয়গুলো আমল করবে অথবা কমপক্ষে অন্য আমলকারীকে বলে দিবে? আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি উপস্থিত আছি। অতঃপর তিনি আমার হাত ধরে এই পাঁচটি বিষয় বর্ণনা করলেন : ১. যে হারাম বিষয়াদি থেকে দূরে থাকে, সে শ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী বান্দাদের
মধ্যে গণ্য হবে। ২. আল্লাহ্ তায়ালা তোমার তকদীরে যা লিখে দিয়েছেন, তাতে সন্তুষ্ট থাক । এতে করে তুমি আল্লাহ পাকের প্রিয় বান্দাহদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
৩. তোমার প্রতিবেশীদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। এতে তুমি মু'মিন হয়ে যাবে।
৪. নিজের জন্য যা কামনা কর, অপরের জন্যেও তাই পছন্দ কর। এভাবে তুমি পূর্ণ মুসলমান হয়ে যাবে।
৫. কখনও অট্টহাসিতে ফেটে পড়ো না। কেননা, অট্টহাসি অন্তরকে মৃত্যু করে দেয়। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী, তরজুমানুস সুন্নাহ)
ঈমান আনার সাথে আমল করার উপদেশ
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিইয়াল্লাহ তায়ালা আনহু বলেন, আবদুল কায়স গোত্রের এক প্রতিনিধিদল যখন রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে পৌঁছল। রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এরা কোন্ কওমের লোক? অথবা কোন্ গোত্রের প্রতিনিধিদল? (এই সন্দেহ রাবীর)। তারা জবাব দিলেন, আমরা ‘রাবীআ’ গোত্রের লোক । হযরত রাসূলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদের গোত্রকে মোবারকবাদ অথবা (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,) তোমাদের প্রতিনিধিদলকে অপমানবিহীন ও অনুতাপবিহীন মোবারকবাদ। অতঃপর প্রতিনিধিদল রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! মাহে হারাম ব্যতীত অন্য মাসে আমরা আপনার। নিকট আসতে পারি না। কেননা, আমাদের ও আপনার মধ্যবর্তীস্থলে এই কাফের মুযার গোত্র অন্তরায়স্বরূপ রয়েছে। সুতরাং আমাদেরকে এমন একটি পরিষ্কার নির্দেশ দান করুন যা আমরা আমাদের অপর লোকদেরকে গিয়ে বলতে পারি এবং যা দ্বারা আমরা (সোজা) জান্নাতে চলে যেতে পারি। তারা পানীয় (অর্থাৎ, পান-পাত্র) সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করল।
• মহানবী রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে চারটি ব্যাপারে আদেশ করলেন এবং চারটি বিষয়ে নিষেধ করলেন। (প্রথমে) তাদের এক আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনতে আদেশ করলেন এবং বললেন; তোমরা জান কি এক আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনা কি? তারা উত্তর করল আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই অধিকতর জ্ঞাত। রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করলেন :
[ আল্লাহ্ ব্যতীত কোন মা'বুদ নেই এবং মুহাম্মদ (দঃ) আল্লাহ্র রাসূল- এই ঘোষণা করা, নামায কায়েম করা, যাকাত আদায় করা এবং রমযান মাসের রোযা রাখা। এছাড়া গনীমতের (জেহাদলব্ধ মালের) 'খুমুস' এক-পঞ্চমাংশ (ইমামের নিকট জমা দেয়া ।
→ অতঃপর হুযূর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে চারটি শরাবপত্রের ব্যবহার নিষেধ করলেন- হান্তম, দুব্বা, নকীর ও মোযাফফাত। আর বললেন, এ সকল কথা স্মরণ রাখবে এবং তোমাদের অপর লোকদেরকে বলবে।
(বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
ঈমান ও আমলের বাই'আত
হযরত উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমি কিছু সংখ্যক লোকের সাথে মহানবী রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বাই'আত করলাম। তিনি (রাসূলূল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করলেন, আমি এ মর্মে তোমাদের বাই'আত গ্রহণ করছি যে, তোমরা আল্লাহর সাথে শরীক কাউকেও করবে না, চুরি করবে না, সন্তানদের হত্যা করবে না।
কোন অপবাদ অর্থাৎ হাত ও পায়ের মাঝে অবস্থিত স্থান (যৌনাঙ্গ) সম্পর্কে কোন অপবাদ সৃষ্টি করবে না এবং কোন নেক কাজে আমার অবাধ্য হবে না।
→ তোমাদের মধ্যে যারা এসব সঠিক পালন করবে আল্লাহ পাকের কাছে তার পুরস্কার নির্ধারিত রয়েছে। আর যারা এগুলো লংঘন করে গুনাহে লিপ্ত হবে, তাদের যদি দুনিয়াতে এ ব্যাপারে শাস্তি প্রদান করা হয় তা হলে তা তার গুনাহর 'কাফফারা' হয়ে যাবে এবং সে পাক-পবিত্র হয়ে যাবে।
→ তবে আল্লাহ্ পাক যদি কারো গুনাহ্ কাজ গোপন রেখে থাকেন তাহলে তা হবে আল্লাহ্ পাকের এখতিয়ারভূক্ত। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দেবেন। কিংবা ইচ্ছা করলে মাফ করে দিবেন। (সহীহ বুখারী। হাদীস নম্বর ৬৯৫০)
ঈমান ও পারস্পরিক ভালবাসা
হযরত আবু হুরায়রা রাদিইয়াল্লাহ তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, হযরত নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, তোমরা বেহেশতে যেতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা ঈমানদার হবে। আর তোমরা পুরোপুরি ঈমানদার হতে পার না, যতক্ষণ না তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপিত হবে। হযরত নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বললেন আমি কি তোমাদের এমন একটি কাজের কথা বলব না, যে অনুযায়ী তোমরা কাজ করলে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা সৃষ্টি হবে? এবং তা এই যে, তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের প্রচলন খুব বেশী করে কর এবং তা একেবারে সাধারণ করে তোল। (মুসলিম)
ঈমান ও চরিত্র
হযরত আবু হুরায়রা রাদিইয়াল্লাহ তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, হযরত নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, মুসলমানদের মধ্যে সর্বাধিক পূর্ণ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যার নৈতিক চরিত্র তাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম। (আবু দাউদ ও দারেমী)
আমল ও আখলাক সুন্দর ও সুসজ্জিত করার সাধনা খুবই কঠিন এবং এই কঠিন কাজে যে যতটুকু অগ্রসর তার ঈমান ততটুকু মজবুত ও কামিল ৷
→ ঈমানদার ব্যক্তির উত্তম আখলাকের বর্ম ছাড়া শয়তান ও তার বাহিনীর অবিরাম আক্রমণ ও উস্কানি থেকে নিজেকে হেফাজত করা খুবই কঠিন। আখেরাতের হিসেবে গৃহে অবশ্যই আল্লাহ পাককে যাবতীয় কাজের হিসেব দিতে, হবে এবং সকল অবস্থায় তাকে সন্তুষ্ট করতে হবে। তাই মু'মিন ব্যক্তির প্রত্যেক পদক্ষেপ ধীর-স্থির ও সুন্দর হয়।
→ আল্লাহ্ পাকের বান্দহদের নফসের তাকীয়া বা তালিম ও তরবিয়াতের মাধ্যমে তাদের আখলাক সুন্দর করার জন্য আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর নবীকে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। ঈমান ও আখলাক এক সূতার দু'টি প্রান্ত । ম যার ঈমান পূর্ণ হবে, তাঁর আখলাকও ভাল হবে। যাঁর আখলাক যত ভাল
হবে তিনি তত পূর্ণ ঈমানের অধিকারী হবেন। → এ দিকের প্রতি ইঙ্গিত করেই আলোচ্য হাদীসে হযরত নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঈমানদারদের মধ্যে সবচেয়ে পূর্ণ ঈমানদার হলো যারা উত্তম আখলাকের অধিকারী। (মা'আরিফুল হাদীস)
ইয়া ঈমান ও নমনীয়নতা
আমর বিন আবাসা রাদিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মহানবী রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম ঈমান কি? জবাবে তিনি বললেন, “সবর (ধৈর্য ও সহনশীলতা) এবং ছালামাত (দানশীলতা, নমনীয়তা ও উদারতা) হচ্ছে ঈমান ।”
ঈমানের স্বাদ গ্রহণকারীর চরিত্র
হযতর আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব রাদিইয়াল্লাহ তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহানবী রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সে-ই ঈমানের স্বাদ পেয়েছে যে আল্লাহকে রব-প্রতিপালক, ইসলামকে দ্বীন-ধর্ম এবং মুহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসূল হিসেবে গ্রহণ করে সন্তুষ্ট রয়েছে। (মুসলিম শরীফ)
ঈমানের পতাকা বহনকারীর পরিচয়
হযরত সালমান ফারেছী রাদিইয়াল্লাহ তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই মর্মে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি ভোরে ফজরের নামাযের দিকে গেল সে ঈমানের পতাকা বহন করে নিয়ে গেল। আর যে ভোরে (নামায না পড়ে) বাজারের দিকে গেল সে শয়তানের পতাকা বহন করে নিয়ে গেল। (ইবনু মাজাহ। এখানে মিশকাত শরীফ থেকে গৃহীত)
ক্ষমা করা ঈমানের বৈশিষ্ট্য
হযরত আবূ হুরায়রা রাদিইয়াল্লাহ তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্র রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, হযরত মূসা বিন ইমরান আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহকে জিজ্ঞেস করছিলেন, ইয়া রব! আপনার বান্দাদের মধ্যে কোন বান্দা আপনার নিকট সর্বাধিক সম্মানিত। আল্লাহ পাক বললেন, যে ক্ষমতা লাভ করার পর মাফ করে দেয়। (বায়হাকী : ওয়াবুল ঈমান)
ইসলামের প্রচারের স্বার্থে পোস্ট টি শেয়ার করুন। সবাইকে শেখার এবং আমল করার তাওফীক দান করুন আমীন