মুসলমানদের বিশেষ অধিকার কি জানুন।

এ পর্যন্ত আমরা যেসব মৌলিক অধিকারের কথা আলোচনা করেছি তা জাতি Muslim der bishes odhikar ki janun

     

    মুসলমানদের বিশেষ অধিকার।






    এ পর্যন্ত আমরা যেসব মৌলিক অধিকারের কথা আলোচনা করেছি তা জাতি


    ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। এবার আমরা এমন কতগুলো অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করব যা কেবল মুসলমানদের বেলায় প্রযোজ্য। এই বিশেষত্বের কারণসমূহের উপরে আমরা “ইসলামে মৌলিক অধিকারের ধারণা” শীর্ষক অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।


    ইসলাম আমাদেরকে মৌলিক অধিকারের যে ধারণা দিয়েছে সেই অনুসারে ইসলামী রাষ্ট্রে মুসলমানদের জন্য কুরআন-সুন্নাহ্ আলোকে নির্ধারিত অধিকারসমূহ মৌলিক অধিকার হিসাবে গণ্য হবে। এইগুলোর মধ্যে উত্তরাধিকার, মালিকানা, ভরণপোষণ, মোহর, বিবাহ, তালাক, খোলা, ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসা-বাণিজ্য এবংজীবনের সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য বিষয়াদি এর অন্তর্ভুক্ত-যা স্থায়ীভাবে ইসলামী শরীআত নির্ধারণ করে দিয়েছে এবং যেগুলো আইন প্রণয়ন করে কোনক্রমেই সংশোধন ও রহিতকরণ করা যায় না।


    এই অধিকারসমূহ ব্যতিরেকে ইসলামী রাষ্ট্রে যেখানে নাগরিক হিসাবে সবাই সমমর্যাদার অধিকারী সেখানে রাজনৈতিক অধিকারের (Political Rights ) বেলায় মুসলিম-অসুমলিমের মধ্যে পার্থক্য কায়েম করা যাবে।


     যেহেতু অমুসলিমরা কুরআন-সুন্নাহ্র উপর ঈমান রাখে না তাই তারা সেসব নীতিমালার ভিত্তিতে প্রভুভক্তির (Allegience) মৌলিক শর্তাবলী পূরণ করতে পারে না যার উপর রাষ্ট্রের গোটা প্রশাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত।



     তদুপরি তারা এই নীতিমালার ব্যবহারিক প্রয়োগের জন্য মুসলমানদের ন্যায় সর্বশক্তিমান আল্লাহ্র নিকট প্রতিশ্রুতিবদ্ধও (Committed) নয়।



     এই কারণেই ইসলাম সরাসরি তাদেরকে রাষ্ট্রের দায়িত্বপূর্ণ পদে এবং এমন সব জনগুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য যোগ্য বিবেচনা করেনি যেগুলোর সম্পর্ক রয়েছে নীতি নির্ধারণের কৌশলের সাথে। অবশ্য তারা এই পলিসিগুলোর বাস্তবায়নের দায়িত্বশীল কার্যক্রমে উচ্চপদে সমাসীন হতে পারবে।



     এই পর্যায়ে প্রখ্যাত মুসলিম রাষ্ট্রতত্ত্ববিদ আল-মাওয়ারদী যিম্মীদের অবস্থান ও মর্যাদা সম্পর্কে লিখেছেনঃ “একজন যিম্মী তথ্যমন্ত্রী (i) হতে পারে, কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারে না। উভয় পদের এখতিয়ার সমূহের মধ্যে যেরূপ পার্থক্য আছে অনুরূপ উভয়ের শর্তাবলীতেও তারতম্য রয়েছে। নিম্নলিখিত চারটি বিষয়ে এই পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায়।


    ১. স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী () নিজেই বিধান জারী করতে পারেন এবং ফৌজদারী মামলার মীমাংসা করতে পারেন। এই ক্ষমতা তথ্য মন্ত্রীর নেই।


    ২. স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়োগ করতে পারেন, কিন্তু তথ্য মন্ত্রীর এই অধিকার নেই।


    ৩. স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সমস্ত সামরিক ও যুদ্ধ সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা নিজেই করতে পারেন। তথ্য মন্ত্রীর এই অধিকার নেই।


    ৪. স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সরকারী কোষাগারের উপর এখতিয়ার আছে। তিনি সরকারের দাবীকৃত ট্যাক্স আদায় করতে পারেন এবং সরকারের অপরিহার্য দেয় পরিশোধ করতে পারেন। এই অধিকারও তথ্য মন্ত্রীর নেই।


    এই শর্ত চতুষ্টয় ব্যতীত এমন কোন বিষয় নেই যা একজন যিম্মীর এই পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পথে প্রতিবন্ধক হতে পারে (আহকামুস-সুলতানিয়্যা, পৃ. ১০৫)।


    ডক্টর হাসান ইবরাহীম হাসান মিসরীও আল- মাওয়ারদীর সাথে একমত হয়ে লিখেন : “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা প্রধান মন্ত্রীত্বের পদে যিম্মীকে নিযুক্তি প্রদান জায়েয নয়। কেননা প্রধানমন্ত্রীত্বের পদের জন্য “নেতৃত্বের শর্তাবলী' অপরিহার্য (ড. হাসান ইবরাহীম হাসান, মুসলমানূ কা নাযমে মুমালিকাত, উর্দূ অনু. মুহাম্মাদ আলীমুল্লাহ সিদ্দীকী, দিল্লী ১৯৪৭ খৃ., পৃ. ১৫৭)।


    ইমাম ইবনে তায়মিয়া, নিযামুল মূলক তুসী এবং অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণও সর্বসম্মতিক্রমে এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এই নীতির অধীনে ইসলামী রাষ্ট্রে মুসলমানগণ নিম্নলিখিত অধিকারসমূহ ভোগ করবে :


    ১. রাষ্ট্রপতি ও প্রধান মন্ত্রীকে অবশ্যই মুসলমান হতে হবে।


    ২. মুসলমানদের ভোটেই তারা নির্বাচিত হবেন। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণও মুসলমানদের মধ্যেই সীমিত থাকবে।


    ৩. যেহেতু কুরআন মজীদে উলুল আমর (সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ)-এর সাথে 'মিনকুম' (তোমাদের মধ্য হতে)- এর শর্ত আরোপ করা হয়েছে তাই সমস্ত দায়িত্বপূর্ণ পদ মুসলমানদের জন্যই নির্দিষ্ট থাকবে। তাহলে তারা কুরআন-সুন্নাহ্ মোতাবেক তাদের নীতি ও পলিসি নির্ধারণ করতে পারবে এবং আদেশদাতা হওয়ার কারণে সেগুলো মুসলমানদের সহযোগিতার মাধ্যমে কার্যকর করতে পারবে। এই নীতির অধীনে ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি, আইন বিষয়ক মন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী (জাতীয় কোষাগারের ব্যবস্থাপক) এবং এই ধরনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে মুসলমানদেরই নিয়োগ করতে হবে।


    ৪. কুরআন মজীদ যেহেতু 'শূরা'র ক্ষেত্রেও 'বাইনাহুম' (তাদের মধ্যে) শর্ত A3 A আরোপ করেছে (TA - Guill) - Nisal (তাদের সমস্ত কার্যকলাপ পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে নিষ্পন্ন হয়), তাই মজলিসে শূরা (পরামর্শ সভা) কিংবা জাতীয় সংসদের সাধারণ সদস্যবর্গকেও মুসলমানদের মধ্য থেকে নির্বাচন করতে হবে। এই সংসদ রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারক প্রতিষ্ঠান, সেখানে কুরআন ও সুন্নাহ্রর আলোকে সমস্ত বিষয়াদি মীমাংসিত হবে। তাই এখানে পরামর্শ দানের দাবী কেবল সেইসব লোকই পূরণ করতে পারে যারা।


    শুধুমাত্র কুরআন-সুন্নাহ্র উপর ঈমানই রাখে না, বরং কুরআন-সুন্নাহ্রর গভীর জ্ঞানে সমৃদ্ধ এবং কুরআন ও সুন্নাহ্র রেফারেন্স দিয়ে সমস্যাবলীর সমাধান পেশের বেলায় পরিপূর্ণ যোগ্যতার অধিকারী। এই অধিকারসমূহ ব্যতীত এমন আর কোন অধিকার নেই, যেখানে মুসলিম ও অমুসলিমের মধ্যে কোন পার্থক্য করা বৈধ হতে পারে।



    LikeYourComment