ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যক্তিজীবন।

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের জীবন অত্যন্ত অর্থবহ। এর একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে। জীবনকে যেমন তেমন করে কাটিয়ে দেওয়া যায় না। তাই মানুষের জীবনকে



    ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যক্তিজীবন ।





    ইসলাম মানুষের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করে। এক্ষেত্রে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো- কোনো মানুষই তুচ্ছ সৃষ্টি নয়। তাই ব্যক্তি তার নিজ ইচ্ছায় নিজেকে ধ্বংস, বিপথগামী করবে কিংবা নিজ সম্পর্কে উদাসীন হবে এমন সুযোগ ইসলাম দেয় না। কুরআন স্বয়ং বলেন ।

    ربنا ما خلقت هذا باطلا "

    ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে অর্থহীন ও উদ্দেশহীন সৃষ্টি করোনি।' সূরা আলে ইমরান : ১৯১




    এই চেতনায় ব্যক্তি নিজের সম্পর্কে সচেতন হবে। এভাবে ব্যক্তির মধ্যে সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ সৃষ্টির জন্য ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। কেননা, যেকোনো জীবনপদ্ধতির মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো- ব্যক্তি এবং এই কারণে ইসলাম ব্যক্তি থেকে যাত্রা শুরু করে।




    মানুষের দুটি প্রকৃতি আছে। একটি অভ্যন্তরীণ, যা দেখা যায় না এবং অন্যটি বাহ্যিক, যা দেখা যায় । ইসলাম এ দুটি সত্তাকেই গুরুত্ব দেয়। এ দুটি সত্তা পরস্পর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, সম্পৃক্ত এবং পরিপূরক। ইসলাম এ দুটি সত্তার ভারসাম্যপূর্ণতার মাধ্যমে ব্যক্তিগঠন করতে চায়।



    মানুষের ভেতরের যে পরিচয় তাকে দুভাগে ভাগ করা যায়- একটি ‘রুহ’ (আত্মা বা কলব) অন্যটি 'আকল' (মন, যুক্তি বা বুদ্ধিবৃত্তি)। ইসলাম এই দুইটি প্রকৃতির খোরাক জোগায় ।





    আধ্যাত্মিক জীবন।


    ইসলামে আত্মার প্রশান্তির জন্য যে ব্যবস্থা তা নিম্নরূপ :

    ১. নামাজ

    ২. জাকাত

    ৩. রোজা

    8. হজ

    ৫. আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ভালোবাসা ৬. আল্লাহর প্রতি আস্থাশীলতা

    ৭. নিঃস্বার্থভাবে আল্লাহর পথে আত্মদান।





    এসব নিয়ে আগেও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এসব অনুশীলনের মাধ্যমে ইসলাম মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করতে চায়।




    বুদ্ধিবৃত্তিক জীবন ।


    বুদ্ধির খোরাকের জন্য ইসলাম মানুষকে জ্ঞান অর্জনের জন্য উৎসাহিত করেছে। অভিজ্ঞতা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনের ঐশী আদেশ কুরআনই প্রথম মানুষকে দিয়েছে।






    কুরআন মানুষকে একজন অন্ধ অনুসারী হতে উৎসাহিত করে না; বরং বুদ্ধি ও জ্ঞানের ওপর গুরুত্ব দিয়ে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও আস্থা জ্ঞাপন করেছে । কেননা, মানুষের ভেতরের আত্মা ও মন সুস্থ ও নিরাপদ হলেই বাইরের দিকটাও সুস্থ ও নিরাপদ হতে পারে ।



    তাই মুসলমানদের জন্য একান্ত প্রয়োজন।


    ■ নিয়মিত কুরআন অধ্যয়ন

    ■ হাদিস অধ্যয়ন

    ■ নবি-সাহাবিদের জীবন অধ্যয়ন

    ... কুরআন হাদিসের আলোকে লেখা ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন।

    এ ছাড়া একজন মুসলমানের জন্য বর্তমান দুনিয়ায় কোথায় কী ঘটছে তা একান্তভাবে জানা প্রয়োজন ।



    এভাবে গড়ে উঠে মুসলমানদের এক বুদ্ধিবৃত্তিক জীবন যা তাকে জ্ঞান বিজ্ঞানসমৃদ্ধ, নিজের আদর্শের প্রতি অবিচল রাখে। সেই সঙ্গে এই জ্ঞান তাকে তার আদর্শের একজন নিষ্ঠাবান প্রচারক হিসেবে গড়ে তোলে।



    বাহ্যিক জীবন।



    ব্যক্তির বাহ্যিক জীবন সুন্দর করার জন্য পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা, খাদ্য সামগ্রী, পোশাক, আচার-ব্যবহার, সাজ-সজ্জা এসব সম্পর্কে ইসলাম সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে ভুল করেনি।




    পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা

    পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে ইসলামের বিধানগুলো শুধু দৈহিক পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়; বরং মানসিক পবিত্রতার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ। দিনে অন্তত পাঁচবার অজু (প্রয়োজনে গোসল), নিয়মিত দাঁত মাজা, চুল ছাঁটা এসব স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ তা আজ সকলের কাছেই পরিষ্কার। আর এসব স্বাস্থ্য রক্ষার বিধান ইবাদত হিসেবে পরিণিত হওয়ায় তা আরও মহিমান্বিত ও চমৎকার হয়েছে।





    ইসলামিক স্বাস্থ্যের  খাদ্য।





    খাদ্যের সাথে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক সরাসরি আছে। খাদ্যের সাথে শুধু তার দেহের সম্পর্ক নয়; বরং মনের সম্পর্ক আছে। তাই ইসলাম ব্যক্তির খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যের জন্য নিয়ম-নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে।

    ইসলামের দৃষ্টিতে খাদ্য হতে হবে পবিত্র এবং মানুষের জন্য কল্যাণকর। খাদ্যের পরিমাণের ব্যাপারেও তা হতে হবে মধ্যম।

    আল্লাহ তাআলা বলেছেন।

    يأيها الناس كلوا مما في الأرض خللا طيبا ولا تتبعوا خطوات الشيط

    اله لكم عدو مبين

    'হে মানুষ সকল! জমিনে যেসব হালাল ও পবিত্র দ্রব্যাদি রয়েছে তা খাও। আর শয়তানের দেখানো পথে চলো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু।' সূরা আল বাকারা : ১৬৮




    যেসব খাদ্য ও পানীয় খাওয়া বা পান করা যায় সেগুলোকে হালাল বলা হয়. আর নিষিদ্ধ খাদ্য ও পানীয়কে বলা হয় হারাম।





    পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজ-সজ্জা।





    মানুষ আল্লাহর সুন্দরতম সৃষ্টি তাই পোশাকও হতে হবে সুন্দর ও শালীন পোশাক শুধু লজ্জা ও উলঙ্গতা ঢাকার জন্য নয়। পোশাক মানুষের ব্যক্তিত্বকে সুন্দর করার একটি মাধ্যম।

    আল্লাহ তাআলা বলেছেন ।

    يبني ادم قد أنزلنا عليكم لباسايواري سواتكم و ريشا ولباس

    التقوى ذلك خير

    “হে আদম সন্তান, আমি তোমাদের জন্য পোশাক দিয়েছি যাতে করে তোমরা দেহের লজ্জাস্থানগুলো ঢাকতে পারো। এটি তোমাদের শোভা বর্ধনের উপায়ও। আর সর্বোত্তম পোশাক হলো খোদাভীতির পোশাক।' সূরা আল আরাফ : ২৬

    পোশাকের ধরন বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। ইসলাম কোনো বিশেষ ধরনের পোশাকের কথা বলেনি। তবে কতগুলো নীতিমালার কথা উল্লেখ করেছে। সেগুলো হলো

    ■ পুরুষরা নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অবশ্যই ঢেকে রাখবে।

    ■ মেয়েরা ঘরে মুখ, হাত, পায়ের পাতা ছাড়া সারা শরীর ঢেকে রাখবে কিন্তু বাইরে বের হওয়ার সময় কিংবা পর পুরুষের সাথে দেখা করার সময় চোখের অংশ ছাড়া মুখমণ্ডল প্রায় সবটাই ঢাকবে। অবশ্য কোনো কোনো মাজহাব পুরো মুখ খোলা রাখার সুযোগ দিয়েছে।

    ... মেয়েদের এমন কোনো পোশাক পরা উচিত নয়, যাতে দেহের অংশ দেখা যায় । খাঁটি রেশমি কাপড় কিংবা সোনার কাজ করা কাপড় পুরুষের জন্য নিষিদ্ধ ।

    ■ পুরুষের মেয়েদের পোশাক পরা নিষেধ।

    মুসলমানদের এমন সব পোশাক পরা উচিত নয় যেগুলো অন্য জাতি বা ধর্মের পোশাক হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত।



    ইসলাম খুব সাদাসিধা পোশাক পরার জন্য উৎসাহিত করেছে। অহমিকা কিংবা প্রদর্শনেচ্ছা জাগিয়ে তোলে এমন পোশাক পরিধানে নিষেধ করা হয়েছে। গর্ববোধ,

    মেয়েদের পোশাকের ব্যাপারে ইসলামের কোনো কঠোরতা নেই; বরং তাদের স্বভাবের দিকে লক্ষ রেখে সম্ভ্রম ও শালীনতা রক্ষার জন্যই মেয়েদের সাজ-সজ্জা, সৌন্দর্য রক্ষা, হাঁটা-চলা এমনকী দৃষ্টি নিক্ষেপের ব্যাপারে ইসলাম নীতিমালা দিয়েছে। একত্রে এই পুরো নীতিমালাকে আমরা বলতে পারি ‘পর্দা প্রথা'।





    খেলাধূলা, চিত্ত-বিনোদন ও উৎসব।




    প্রিয়নবি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য ও বলিষ্ঠ মনোবল গড়ে তোলার উপযোগী খেলাধুলা ও চিত্তবিনোদনকে অনুমোদন করেছেন। মোটকথা যা কিছু মানুষের মধ্যে সুস্থ চিন্তার সৃষ্টি করে, তার মনকে সতেজ ও শরীরকে সুস্থ রাখে ইসলাম তাকে উৎসাহিত করে। রাসূল (সা.)-এর একটি হাদিস থেকে তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। তিনি বলেছেন

    “সকল মুমিনের মধ্যেই ভালো গুণাবলি আছে। তবে শক্তিশালী ব্যক্তি দুর্বল ব্যক্তির চেয়ে শ্রেয়।' মুসলিম, ইবনু মাজাহ

    ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের জীবন অত্যন্ত অর্থবহ। এর একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে। জীবনকে যেমন তেমন করে কাটিয়ে দেওয়া যায় না। তাই মানুষের জীবনকে সুন্দর করার জন্য ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকেও ইসলাম আল্লাহর নির্দেশে লাগাম টেনে ধরেছে। এই দৃষ্টিতেই ইসলামে জুয়া খেলা, মদ্যপান, লাগামহীন সময় অপচয় করে তাস খেলা প্রভৃতিকে নিষিদ্ধ করেছে। প্রকৃতপক্ষে এগুলোর কোনোটাই আনন্দদায়ক বা বিনোদনমূলক কাজ নয় ।

    ইসলামের উৎসব পালনও এই একই দৃষ্টিভঙ্গিতে হয়ে থাকে । ইসলামে উৎসব নিছক আনন্দের জন্য নয়। এসব উৎসবের মূল লক্ষ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি। এমনই উদ্দেশ্য নিয়েই ইসলামের দুটি বড়ো উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালিত হয়।

    কবিতা, গান এসব ব্যাপারেও ইসলামের নির্দেশ একই ধরনের। মোটকথা, যে খেলাধুলা কিংবা চিত্তবিনোদন একটি মুহূর্তের জন্য বান্দাকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে রাখে তা মুমিন-মুসলমানের জন্য কখনই আনন্দদায়ক, সুখকর কোনো কাজ হতে পারে না । মুমিনের আনন্দ তো আল্লাহকে পাওয়ার মধ্যে। তার জীবনের সবচেয়ে বড়ো আনন্দ হলো- আল্লাহর আইনকে দুনিয়ার বুকে কায়েমের উদ্দেশ্যে প্রতিটি কাজে এগিয়ে আসা।


     পোস্ট টি শেয়ার করুন আমীন।

    LikeYourComment