দোয়া কবুল হওয়ার সময় । Time to accept the prayer
কদরের রাত। বেশির ভাগই আশা করা হয়, রমযান মোবারকের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাত্রিগুলো যথা—২১শে, ২৩শে, ২৫শে, ২৭শে বা ২৯শে তারিখে কদরের রাত হতে পারে। এর মধ্য
দোয়া কবুল হওয়ার সময়।
দোয়া কবুল হওয়ার সময়। |
দু'আ কবুল হওয়ার সময় নিম্নরূপ :
১. কদরের রাত। বেশির ভাগই আশা করা হয়, রমযান মোবারকের শেষ দশ দিনের বিজোড় রাত্রিগুলো যথা—২১শে, ২৩শে, ২৫শে, ২৭শে বা ২৯শে তারিখে কদরের রাত হতে পারে। এর মধ্যে ২৯শে ও ২৭শে রাত্রে হওয়ার সম্ভাবনাই সর্বাধিক।
২.আরাফার পুরো দিন (যিলহজ মাসের ৯ তারিখ)। ৩. রমযান মোবারকের সম্পূণ মাসে।
৪. জুমার (অর্থাৎ বৃহস্পতি ও শুক্রবারের মধ্যবর্তী) রাত। ৫. জুমার পূর্ণ দিন (বিশেষ করে দুই খোতবার মাঝে যখন ইমাম বসেন।
এবং জুমার দিন সূর্যাস্তের সময়) ৬. প্রতি রাত্রের দ্বিতীয় অর্ধাংশ।
৭. প্রতি রাত্রের প্রথম এক তৃতীয়াংশ
প্রতি রাত্রের শেষ এক তৃতীয়াংশ ।
৯. প্রতি রাত্রের শেষ এক তৃতীয়াংশের মধ্যবর্তী অংশ ।
১০. প্রতি রাত্রের সেহরীর সময়।
১১. জুমার দিন দু'আ কবুল হওয়ার সবচেয়ে আশা এবং দু'আ কবুল হওয়ার মুহূর্ত বর্তমান। এ মুহূর্ত সম্পর্কে হাদীস শরীফে নিম্নরূপ আলোচনা রয়েছে :
ক. এ পবিত্র মুহূর্ত খোতবা দেয়ার জন্যে মিম্বরের উপর ইমামের বসা থেকে শুরু করে জুমার নামায সমাপ্ত হওয়া পর্যন্ত।
খ. জুমার জামাতের শুরু থেকে সালাম ফিরানো পর্যন্ত । গ. হাদীসের আলোকে মুহাদ্দিসীনে কেরাম বলেন : (জুমার দিন) আসরের
নামাযের পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। ঘ. কোন কোন বুযুর্গ বলেছেন, জুমার দিনের শেষ সময়।
ঙ. কেউ কেউ বলেন, (জুমার দিন) সুবহে সাদেক থেকে শুরু করে সূর্যোদয়
পর্যন্ত
চ. কেউ কেউ বলেন, জুমার দিন সূর্যোদয়ের পর থেকে দু'আ কবুলের সময়
শুরু হয়।
ছ. বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবুজর গিফারী (রা.) বলেন, দু'আ কবুল হওয়ার সময় (জুমার দিন দ্বিপ্রহরে) সূর্য ঢলে পড়ার একটু পর থেকে এক হাত
পরিমাণ ঢলে পড়া পর্যন্ত
দু'আ কবুল হওয়ার অবস্থা
দু'আকারী যদি নিম্ন অবস্থায় দু'আ করে, তা হলে আশা করা যায়, আল্লাহ
আল্লাহ পাক তার দু'আ অবশ্যই কবুল করবেন।
১. নামাযের আযান হওয়ার সময় (অর্থাৎ আযান, আযানের জবাব প্রদান এবং আযান সমাপ্ত হওয়ার পর দু'আ করবে)। ২. আযান ও তাকবীরের মধ্যবর্তী সময় (অর্থাৎ আযান একামতের ম যখনই সুযোগ হয় তখনই দু'আ করা)।
৩. যে ব্যক্তি কোন বালা-মসিবত বা কঠিন অবস্থায় পতিত হয়, সে ইি
'আলাছ ছালাহ', 'হাইয়া 'আলাল ফালাহ'-এর পরে আল্লাহর নিকট দু'আ করবে। ৪. আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ জেহাদে) যখন কাতারবন্দী হবে তখন দু'জ করবে। ৫. যুদ্ধের কঠিনতম অবস্থায় যখন পরস্পর আক্রমণ চলবে, তখন দুজ
করবে।
৬. ফরয নামাজের পরে (অর্থাৎ জামাতের সাথে ফরয নামায পড়ে) সালাম ফিরানোর পরে দু'আ করবে। ৭. কুরআনের পরে (চাই একা নিজেই খতম করুক না বা অন্য এক ব
একাধিক ব্যক্তি খতম করুক) দু'আ করবে। ৮. বিশেষ করে কুরআন খতমকারীর দু'আ।
৯. জমজমের পানি পান করা অবস্থায় (অর্থাৎ জমজম কুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে তার পানি পান করবে এবং দু'আ করবে)।
১০. মৃত্যুমুখী মানুষের জানকান্দানীর সময়ে (স্বয়ং মৃত্যুমুখী ব্যক্তি যেমন দু'আ করবে, তেমনি উপস্থিত ব্যক্তিরাও দু'আ করবে)। অনুরূপভাবে যারা মুত ব্যক্তির কাছে আসবে তারাও দু'আ করবে।
১১. (ভোরে) মোরগ ডাক দেয়ার সময় (অর্থাৎ মোরগের ডাক শোনার
পরে) দু'আ করা।
১২. যিকিরের মজলিসসমূহে (চাই তা যিকরুল্লাহ্র মজলিস হোক, কুরআন হাদীস পঠন-পাঠন বা আলোচনার স্থান হোক কিংবা ওয়াজ-নসীহতের মাহফিল
মজলিস হোক)।
১৩. মৃত ব্যক্তির চোখ বন্ধ করার সময়।
১৪. নামাজের একামত (তাকবীর) বলার সময়।
১৫. বৃষ্টিপাতের সময়। ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) তাঁর রচিত YI (আলউম) নামক কিতাবে এ হাদীস 'মুরসাল' হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেন, আমি হাদীসের বহু সংখ্যক আলেমের নিকট বৃষ্টিপাতের সময়ে দু'আ কবুল হওয়ার হাদীস শুনেছি এবং মুখস্থ রেখেছি।
১৬. ইমাম জাজরী (র) বলেন,
ক. কাবা শরীফ দেখার সময়ে (কাবা শরীফে পৌঁছে প্রথম বার কিংবা যতবারই তা দৃষ্টিগোচর হয়) দু'আ করা।
খ. সূরা (আন'আম)-এ যেখানে একই স্থানে দু'বার 'ইসমে জালালাত' অর্থাৎ আল্লাহ জাল্লা শানুহুর পবিত্র নাম একত্র হয়েছে, সেখানে অর্থাৎ সেই নামের মাঝে দু'আ করা। সেই স্থান হল :
مثل ما أوتي رسل الله ط الله أعلم حيث يجعل رسالته
تی
বহু আলেম এই পবিত্র আয়াতে দু'বার 'আল্লাহ' শব্দের মাঝখানে দু'আ কবুল হওয়ার পরীক্ষিত ঘটনার কথা শুনেছেন এবং স্মরণে রেখেছেন। হাফেজে হাদীস আবদুর রাজ্জাক রাসগানী (রহ) তাঁর ‘তাকদীর' গ্রন্থে শায়খ ইমাম মাকদেসী থেকে এ স্থানে দু'আ কবুল হওয়ার বিষয় উদ্ধৃত করেছেন।
দু'আ কবুল হওয়ার স্থান।
সকল পবিত্র জায়গা যেমন – মসজিদ, যিকিরের স্থান, নামাযের স্থান। ইমাম হাসান বসরী (রহঃ) মক্কাবাসীদের নিকট একখানি চিঠি দিয়েছিলেন। সে চিঠিতে তিনি পবিত্র মক্কায় দু'আ কবুল হওয়ার পনরটি স্থান উল্লেখ করেছেন। যথা
১. মাতাফ অর্থাৎ তওয়াফের স্থান।
২. মুলতাজামের নিকট (খানায়ে কাবার সে অংশ যেখানে তাওয়াফকারীরা বুক পেট লাগিয়ে দু'আ করে।) এটা 'হাজরে আসওয়াদ' ও কাবা গৃহের দরজার মাঝখানে চার হাত পরিমাণ জায়গা)।
৩. মীজাব-এর (কাবা গৃহের ছাদের পানি যে নালা দিয়ে পতিত হয় সেই নালার) নিচে।
৪. কাবা গৃহের ভিতর।
৫. জমজম কূপের নিকটে।
৬. ছাফা পাহাড়ের উপরে।
৭. মারওয়া পাহাড়ের উপরে ।
৮. ছাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝে যেস্থানে দৌড় দেয়া হয় সেখানে। ৯. মাকামে ইব্রাহীমের পেছনে।
১০. আরাফাতের ময়দানে (যেখানে ৯ই যিলহজ সূর্য ঢলে পড়ার পর থেকে সূর্যান্ত পর্যন্ত অবস্থান করা হয়। আর এ অবস্থানই হচ্ছে হজ্বের আসল রোকন। ১১. মুজদালাফায় (যেখানে হাজী সাহেবান) আরাফাত থেকে ফিরে এসে
মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করে এবং গোটা রাতই সেখানে অতিবাহিত ১২. মিনা'য় (যেখানে ১০ই যিলহজ্ব তারিখে হাজী সাহেবান পাথরের করে)। টিলার গায়ে ছোট প্রস্তরখণ্ড নিক্ষেপ করে এবং কুরবানী করে)।
১৩. তিনটি টিলার নিকট (এর উপর হাজীরা পাথরখণ্ড নিক্ষেপ করে থাকে)।
১৪. হযরত রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রওজা মোবারকে" দু'আ কবুলের উপযুক্ত স্থান।
যাদের দু'আ শীঘ্রই কবুল হয়।
বহু সংখ্যক সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, বিশেষভাবে নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণের দু'আ শীঘ্রই কবুল হয় : ১. নিরুপায়, অসহায় ও শক্তিহীন ব্যক্তির দু'আ।
২. মজলুম নির্যাতিত লোকের দু'আ (এক বর্ণনায় আছে; হোক সে পাপী ও গোনাগার, আরেক বর্ণনায় আছে, হোক সে কাফের)।
৩. পিতার দু'আ (সন্তান-সন্ততিদের জন্য)।
৪. ন্যায়বিচারক শাসকের দু'আ (অর্থাৎ ন্যায় ও ইনসাফকারী খলীফা বা বাদশাহ্ কিংবা শাসনকর্তার দু'আ তাদের অধীনস্ত লোকদের জন্য)।
৫. প্রত্যেক নেককার ব্যক্তির দু'আ।
৬. মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহারকারী ও সেবা শুশ্রূষাকারী সন্তানদের দু'আ (মাতা-পিতার জন্য)।
৭. মুসাফির (বিদেশে ভ্রমণকারী) ব্যক্তির দু'আ। ৮. ইফতারের সময়ে রোযাদার ব্যক্তির দু'আ।
৯. এক মুসলমানের জন্য তার অসাক্ষাতে অন্য মুসলমান ভাইয়ের দু'আ।
১০. প্রত্যেক মুসলমানের দু'আ, যদি না সে জুলুম, আত্মীয়তা ছিন্নকরণ বা
হক বিনষ্টকরণ ইত্যাদির জন্য দু'আ করে। অথবা যদি না সে দু'আর মধ্যে নৈরাশ্য, হতাশা বা এ ধরনের অভিযোগ না করে, আমি দু'আ করেছিলাম, কিন্তু তা কবুল হল না।
১১. এক হাদীসে আছে : "আল্লাহ পাকের কিছু সংখ্যক (জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্ত এমন বান্দা রয়েছে, যাদের প্রত্যেকের দিন রাত্রির মধ্যে একটি করে দু'আ (অবশ্যই) কবুল হয়ে যায়।"
'জামে মানছুর'-এর এক বর্ণনায় আছে : সহীহ হাদীস মতে হজ্ব থেকে ঘরে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত হাজীর দু'আও কবুল হয়ে থাকে।
দোয়া কবুলের পথে যে সমস্ত বিষয় অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়
* গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকা।
* হারাম খাদ্য ও জীবিকা ভক্ষণ করা।
* কারো ওপর অত্যাচার করা।
* দোয়া কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়া করা ।
* অহংকারমুক্ত না হয়ে দোয়া করা।
* পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া ও তাদের কষ্ট দেয়া।
* যাদু-মন্ত্ৰ, বান-টোনা ইত্যাদি পেশা গ্রহণ করা।
* অন্যায় কর্ম থেকে বিরত না থাকা।
* অন্যমনস্ক হয়ে দোয়া করা।
* অতীতের পাপ কাজের জন্য আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত না হওয়া। * দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে সন্দিহান থাকা ।
দোয়া করার আদব।
প্রত্যেক কাজের বেলায়ই কিছু সুশৃঙ্খল পদ্ধতি মেনে চলতে হয় বা আদব ও নিয়ম-কানুন রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ রব্বুল 'আলামীন হলেন আমাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা এবং রিজিকদাতা। তাই আমাদের কিছু চাইতে হলে একমাত্র তাঁকেই ডাকতে হবে বা তাঁর দরবারেই দোয়া করতে হবে; আর্জি জানাতে হবে। আর এ দোয়া করার মধ্যেও রয়েছে কিছু আদব ও নিয়ম-কানুন । দোয়ার আদব ও নিয়ম-কানুনের মধ্যে কতগুলো রয়েছে ভিত্তিস্বরূপ, আর কতগুলো রয়েছে শর্তস্বরূপ। কোরআন ও হাদীসের আলোকে নিম্নে দোয়ার
আদবসমূহ উল্লেখ করা হলো : হারাম থেকে বেঁচে থাকা দোয়া কবুলের ভিত্তিস্বরূপ। -(মুসলিম, তিরমিযী * খাওয়া-দাওয়া, পানাহার, পোশাক-পরিচ্ছদ ও * ইখলাছ অর্থাৎ, জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে) বেলায় রুজি-রোজগারের
কোরআন ও হাদীসের আলো।
করা। এর মধ্যে অন্য নিয়ত না থাকাই হচ্ছে দোয়ার আদবের ভিত্তিমূল । * দোয়া করার পূর্বে কোন নেক কাজ বা এবাদত করা উচিৎ। যেমন সদকা ও দান খয়রাত করা, কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা, নামায পড়া ইত্যাদি। আর কঠিন বিপদাপদের সময় স্বীয় নেক আমলসমূহের উসিলা দিয়ে দোয়া করা। -(মুসলিম, তিরমিযী, আবু-দাউদ)
* দোয়ার পূর্বে ওযূ করা।
কেবলার দিকে মুখ করে দোয়া করা।
* অপবিত্র বস্তু থেকে পবিত্র হয়ে দোয়া করা।
* দোয়া করার পূর্বে ছলাতুল হাজাতের নামায পড়ে দোয়া করা। * দোয়া করার জন্য নামাযের বৈঠকের ন্যায় নতজানু হয়ে বসে দোয়া করা।
* উভয় হাত উত্তোলন করে দোয়া করা।
* মুখমণ্ডলের ওপর পর্যন্ত হাত উঠিয়ে দোয়া করা।
* দোয়া করার পূর্বে ও পরে আল্লাহ তা'আলার গুণাবলী প্রশংসাসূচক সম্বলিত দোয়ার শব্দ প্রয়োগ করা।
* এমনিভাবে দোয়া করার পূর্বে ও পরে রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি দুরূদ প্রেরণ করা।
* ভিক্ষুকের ন্যায় হাত উঠিয়ে দোয়া করা ।
* উভয় হাতের মধ্যখানে অতি সামান্য ফাঁক রেখে দোয়া করা ।
* দোয়া করার সময় মুখে ও কাজ-কর্মের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার শান শওকতের প্রতি আদব-ইহতেরাম বজায় রাখা। * দোয়া করার সময় নম্রতা ও বিনয়াবনত হয়ে এবং কাকুতি-মিনতি করে
দোয়া করা।
* খুব অনুনয়-বিনয় করে দোয়া করা।
* দোয়া করার সময় আকাশের দিকে নজর না দেয়া । * অনুচ্চৈঃস্বরে দোয়া করা মোস্তাহাব।
* আল্লাহ তা'আলার নেক বান্দা ও অলী-আল্লাহদের ওসীলা দিয়ে দোয়া করাও মোস্তাহাব।
* আল্লাহ তায়ালার আসমায়ে হুসনা (সুন্দরতম নামসমূহ) তাঁর মহান গুণাবলীর উসীলা দিয়ে দোয়া করা।
* আম্বিয়ায়ে কোরামদের উসীলা দিয়ে দোয়া করা।
* স্বীয় গুনাহসমূহের স্বীকারোক্তি পেশ করে দোয়া করা।
* দোয়ার মধ্যে কৃত্রিম শব্দ বিন্যাসের পথ বর্জন করে চলা।
* দোয়ার মধ্যে ইচ্ছাপূর্বক গজল-গান পাঠ করা, আর কৃত্রিমতা করে গলার স্বরে তরঙ্গ তোলা মাকরূহ।
* হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে সকল দোয়া বর্ণিত হয়েছে তা পাঠ করে দোয়া করা। নবী করীম ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দোয়ার ভেতর প্রয়োজনীয় বিষয় পরিত্যাগ করেননি। যে সকল প্রয়োজন বা হাজতের জন্য মানুষ সাধারণ দোয়া করে থাকে, তিনি তার সমুদয় বিষয়ের জন্য দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন।
* দোয়া করার সময় ব্যাপক অর্থবোধক শব্দসমূহ ব্যবহার করা এবং সংক্ষিপ্ত দোয়াসমূহ পাঠ করে দোয়া করা।
* দোয়া করার সময় প্রথমে নিজের সমস্যা থেকে আরম্ভ করা, তারপর স্বীয় পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন এবং সমগ্র দুনিয়ার মু'মিনদের জন্য দোয়া করা।
* দোয়াকারী যদি মসজিদ বা রাষ্ট্রের ইমাম বা নেতা হন, তাহলে কেবল মাত্র নিজের জন্যই দোয়া করবে না, বরং সমগ্র মুসল্লি ও সকল মুসলমানের জন্য দোয়া করা।
* দোয়া কবুল হওয়ার জন্যে ব্যস্ত না হওয়া। যেমন : দোয়ার ভেতরে এ না বলা যে, আমার দোয়া পূরণই হয় না অথবা আমি দোয়া করেছিলাম, কিন্তু তা কবূল হয় নি। এতে আল্লাহ তা'আলার ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করা হয়। যা অতিশয় গর্হিত কাজ ।
* দোয়া করার সময় আল্লাহর প্রতি ঐকান্তিক বিশ্বাস ও দৃঢ় আশা-পোষণ করা, কোনরূপ নৈরাশ্যের ভাব মনে না আনা-এটা দোয়ার আদবসমূহের ভিত্তি বিশেষ ।
* খুবই উৎসাহ-উদ্দীপনা আর মনের অনুরাগ ও আগ্রহ নিয়ে আন্তরিকতার
সবাই মিলে একসাথে দোয়া করা।
• অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে পূর্ণ মনোযোগ নিয়ে ও একনিষ্ঠ হয়ে দোয়া করা। মনে মনে আল্লাহর প্রতি সর্বোত্তম ধারণা পোষণ করা। হয়ে
* আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য সৃষ্টিগতভাবে যা নির্ধারিত হয়ে এসেছে, তা রদবদল করার জন্য দোয়া না করা। যেমন: হে আল্লাহ! আপনি অমুককে নারী থেকে পুরুষ অথবা পুরুষ থেকে নারী জাতিতে পরিবর্তন।
দিন- এটাও দোয়ার শর্ত বিশেষ । * দোয়া করার সময় শরীয়তের সীমাতিক্রম না করা। আর অসম্ভব, অবাস্ত
ও কাল্পনিক বিষয়ের জন্য দোয়া না করা। * আল্লাহর রহমতকে সংকুচিত না করা। (যেমনঃ হে আল্লাহ! আমাকে রহমত দান করুন! আর অমুককে রহমত থেকে বঞ্চিত করুন! ইত্যাদি না বলা।
* একই উদ্দেশ্যের জন্য বারবার দোয়া করা । * দোয়ার মধ্যে একই বিষয় কমপক্ষে তিনবার করে বলা ।
* কোন বিষয় নিয়ে এমনভাবে দোয়া না করা যে, “আমার এ প্রার্থনা তোমার ককূল করতেই হবে।”
* স্বীয় প্রয়োজন ও দাবী-দাওয়া যত ছোটই হোক না কেন তা একমাত্র
আল্লাহর কাছেই প্রার্থনা করা।
* যিনি দোয়া করবেন আর যারা শরীক হবে, সকলেই ‘আমীন-আমীন' বলা। এই ৩কে মুখমণ্ডলের ওপর বুলিয়ে দোয়ার কাজ শেষ করা।
আল্লাহর কাছে দোয়া না করার ক্ষতি।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা'আলা এরশাদ করেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া করো, আমি সাড়া দেবো। যারা আমার এবাদতে অহংকার করে, তারা সত্ত্বরই জাহান্নামে দাখিল হবে, তারা হবে লাঞ্ছিত।” (সূরা আল-মু'মিন আয়াত-৬০)। আল্লাহর কাছে দোয়া করার দ্বারা যেমন বান্দার অক্ষমতা, অপারগতা, নম্রতা ও হীনতা প্রকাশ পায়, তেমনি আল্লাহর দরবারে দোয়া না করার দ্বারা তাঁর সামনে গর্ব ও অহংকারই প্রকাশ পায়। আল্লাহর কাছে কোন কিছু না চাওয়ার দ্বারা এ কথাই প্রকাশ পায় যে, “আল্লাহর কাছে আমার কোন কিছু চাওয়ার প্রয়োজন নেই-না 'উযুবিল্লাহ!”
যারা আল্লাহর কাছে দোয়ার জন্য হাত তোলে না আল্লাহ তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, যারা আল্লাহর সমীপে দোয়া করে না, তাদের প্রতি তিনি রাগান্বিত হন!
( সুনানেই তিরমিযযী)